পাটকে বলা হয় সোনালি আঁশ। খুবই গুরুত্বপূর্ণ এ ফসল চাষে বিভিন্ন পোকামাকড় ও রোগ আক্রান্তের সম্ভাবনা থাকে। এসব পোকা দমনে ১ মে থেকে ১৫ মে পর্যন্ত করণীয় জানিয়েছে কৃষি তথ্য সার্ভিস।
উড়চুংগা- যে জমিতে প্রায় প্রতি বছর পাট অথবা অন্য ফসলের আবাদ হয়, সেখানে উড়চুংগা দেখা দেয়। ওই জমিতে পাটবীজ বপনের পূর্বে জমি শেষবারের মতো ভালো করে চাষ দিয়ে প্রতি লিটার পানিতে কীটনাশক ক্লোরোপাইরিফস ৫এমএল মিশিয়ে প্রতি একর পাটের জমিতে প্রয়োগ করতে হবে।
এরপর নিয়ম মাফিক বীজ বপন করতে হবে। যদি ওষুধ প্রয়োগ সম্ভব না হয় তবে বীজের পরিমাণ একটু বাড়িয়ে বপন করা ভালো। যাতে জমিতে যথেষ্ট পরিমাণ চারাগাছ থাকার কারণে উড়চুংগা কিছু গাছ কেটে ফেললেও ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া যায়। যদি সম্ভব হয় তবে দেরিতে পাট বপন করলে উড়চুংগার আক্রমণ এড়ানো যায়। খরা মৌসুমে উড়চুংগা পোকা চারা পাট গাছের বিশেষ ক্ষতি করে। এ সময় সেচের ব্যবস্থা করলে উড়-চুংগার উপদ্রব থেকে ফসল রক্ষা করা যায়।
চেলেপোকা- এপ্রিলের মাঝামঝি থেকে (বৈশাখের প্রথম থেকে) চারা পাটে চেলেপোকার আক্রমণ দেখা দেয়। যা ফসল কাটা পর্যন্ত স্থায়ী হয়। পাটক্ষেতের পাশে বনওকড়া গাছ এবং অন্যান্য আগাছা পরিষ্কার রাখলে এ পোকার আক্রমণ কম হয়।
মৌসুমের প্রথমেই পাটের পরিচর্যার সময় ওইসব ডগা আক্রান্ত গাছগুলি তুলে ধ্বংস করতে হবে। এতে পোকার উপদ্রব কমে যাবে। গাছের উচ্চতা ১২-১৪ সেন্টিমিটার লম্বা হওয়ার পর চেলে পোকার আক্রমণ বেশি হলে কীটনাশক ছিটিয়ে দিলে ভালো ফল পাওয়া যায়। এক মৌসুমে তিনবার কীটনাশক ছিটিয়ে প্রায় সম্পূর্ণরূপে পোকা দমন করা যায়। সাইপামেথ্রিন ১০ ইসি শূন্য দশমিক ৫ মিলি অথবা ডায়জিনন ৬০ ইসি প্রতি লিটারে এক দশমিক ৫ মিলি পরিমাণ মিশিয়ে আক্রান্ত পাটক্ষেতে ছিটিয়ে দিলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
হলুদ বা সাদা মাকড়- এ মাকড় পাট গাছের কচি পাতার উল্টো দিকে বসে পাতার রস চুষে খায়। পাতা তামাটে রং ধারণ করে। একটানা অনাবৃষ্টির ফলে আক্রমণ ব্যাপক হয়। ক্রমে পাতা ঝরে যায় ও ডগা মরে যায়।
তাই হলুদ বা সাদা মাকড়ের আক্রমণ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে একর প্রতি এবামেকটিন এক দশমিক ইসি ১এমএল প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে মেশিনের সাহায্যে এমনভাবে ছিটাতে হবে যেন ডগার উপরের কচি পাতাগুলো (১০ম পাতা পর্যন্ত) ভালোভাবে ভিজে যায়। অথবা আধা কেজি নিম পাতা ১০ কেজি গরম পানিতে ৫ থেকে ১০ মিনিট ভিজিয়ে রেখে ১০ মিনিট পর নিম পাতার নির্যাস ছেকে ঠান্ডা করতে হবে। এ নির্যাস (ডগার ১০ম পাতা পর্যন্ত) পাট গাছে ছিটিয়ে হলুদ মাকড় দমন করা যায়।
প্রথমবার স্প্রে করার দ্বিতীয় দিন একইভাবে ওষুধ আবার ছিটালে ভালো ফল পাওয়া যায়। মনে রাখতে হবে যে ডগার পাতায় ওষুধ ছিটালেই যথেষ্ট।